শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে কি করণীয়
শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় হল ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা দিতে দেরি করে ফেলেন এইসব বিষয়ে ডাক্তারকে বলতে হবে। টিকা দিতে দেরি হলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে শিশু নানান রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুদের টিকা দেওয়ার সময়সূচী বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালিত করে।এছাড়াও কোন রোগের জন্য কোন টিকা দেওয়া হয়, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আগে শিশুর চারবার টিকা দিলেই হয়ে যেত এখন বর্তমান নতুন নতুন টিকা যুক্ত হয়েছে। তাই প্রতিটি মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে টিকাগুলো সম্পর্কে।
শিশুদের টিকা দেওয়ার সময়সূচী বাংলাদেশ
শিশুদের টিকা দেওয়ার সময়সূচী বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন।যেখানে এক বছরের কম বয়সী প্রায় ৯৭.৪% শিশুদের টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাদানের সময়সূচি অনুসরণ করার গুরুত্ব ও টিকাগুলো সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেন। শিশুরা যাতে রোগে আক্রান্ত না হয় তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের টিকা গ্রহণ অপরিহার্য। নির্দিষ্ট সময় টিকা দেওয়ার জন্য সময়সূচি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় গুলো হল দেখা যায় শিশুর যে বয়স থেকে টিকা দেওয়ার সময় হয় তারও অনেক দেরিতে টিকা দিতে নিয়ে যাওয়া হয় এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই টিকা দিতে হবে। অনেক সময় প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজের সময় চলে গেছে কিন্তু মনে নাই সেই ক্ষেত্রে যেই ডোজ মিস হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মিস হওয়া ডোজ টি পূরণ করতে হবে। তারপর থেকে পুনরায় ডোজ চলবে।
শিশুদের জন্মের পরপরই বিসিজি নামক ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। এবং পেন্টাভ্যালেন্ট, পিসিভি, ও পি ভি ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ ৬ সপ্তাহ বয়সের, ১০ সপ্তাহ বয়সে এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে দিতে হয়। তাছাড়াও শিশুদের হাম রুবেলা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এটা ৯ মাস এবং ১৫ মাস বয়সে দুইটি ডোজ সম্পন্ন করতে হবে। শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় জানতে হবে।
সরকারি কর্মসূচিতে (বিসিজি) যক্ষা, ও মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা (ওপিভি) জন্মের পরপরই দেওয়া যায়। তবে যক্ষা টিকার হাতে দাগ না উঠলে ১৪ সপ্তাহে আবার দিতে হয়। এগুলো বাদেও সরকার বর্তমানে আরও দশটি টিকা বিনামূল্যে শিশুদের দিয়ে থাকে।
শিশুদের মোট কয়টি টিকা দিতে হয়
শিশুদের মোট কয়টি টিকা দিতে হয় এ বিষয়ে বলতে গেলে আগে শিশুদের চারটি টিকা দিত। এখন বর্তমানে শিশুদের মোট ছয়টি টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ছয়বার ঠিকা কেন্দ্রে যেতে হয়। পাশাপাশি আরও কিছু টিকা যুক্ত করা হয়েছে সরকারিভাবে এগুলো দিয়ে থাকে। তাই শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় দ্রুত টিকা কেন্দ্রে যাওয়া এবং তাদের কাছে বিস্তারিত খুলে বলা।
শিশুদের ছয়টি টিকার নাম
শিশু জন্মের পর থেকে ছয়টি টিকা দেওয়া হতো বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দশটি টিকা সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। প্রথমের দিকে যেসব ছয়টি টিকা দেয়া হতো। সেই ছয়টি টিকা কি কি তা চলুন জেনে নিন। আরও জেনে নিন শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় বিষয়গুলো।
বিসিজি টিকাঃ বিসিজি টিকা শিশুর যক্ষা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। শিশুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই টিকা দেওয়া ভালো তবে দেড় মাস বয়স পর্যন্ত সময় থাকে। যত দ্রুত সম্ভব দিতে হয়। ফুসফুস এবং কখনো কখনো শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাড় অস্থিসন্ধি কিডনিতে আক্রমণ করে থাকে।
পেনটাভালেন্ট টিকাঃ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়ার কারণ হলো ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার এইসব রোগ থেকে রক্ষা করে।
পোলিও ভ্যাকসিনঃ পোলিও ভ্যাকসিন পোলিও ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। পোলিওর টিকা দুই ধরনের ভ্যাকসিন একটি ওপিভি ও আরেকটি আইপিভি।
পিসিভি টিকাঃ পিসিভি টিকা মূলত নিউমোনিয়া রোগের প্রতিশোধক। নিউমোনিয়া শিশুর শ্বাসনালী নাকের গহ্বর সংক্রমিত
রোটাভাইরাস টিকাঃ রোটা ভাইরাস টিকা শিশুদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কেননা শিশুদের এই সময় ঘন ঘন ডায়রিয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যা করলে ডায়রিয়া থেকে বাচ্চা মুক্তি পায়। কিন্তু এই রোটা ভাইরাস জনিত টিকার ভ্যাকসিন দিলে ডায়রিয়া প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে। প্রথম ডোজ ১২ সপ্তার বয়সের মধ্যে দিতে হয়, পরবর্তী ডোজ দশ সপ্তাহ বয়সের মধ্য দিতে হয়।
হামের টিকাঃ বলতে গেলে শিশুদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টিকা। মারাত্মক কষ্টদায়ক একটি রোগ হাম। তাই শিশুদের হামের টিকা দেওয়া জরুরী ১৫মাস বয়সে এই টিকা দিতে হয়।
কিছু কিছু ভ্যাকসিন আছে সারা জীবনের জন্য সুরক্ষা দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার কাজ করে না সে ক্ষেত্রে নতুন করে আবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগই টিকা শিশুকে সারা জীবনের জন্য সুরক্ষা দেয়। তাই শিশুদের এইসব টিকা কোন ভাবেই মিস করা উচিত নয়। তাই শিশুর টিকা কোনভাবে মিস হয়ে গেলে কিংবা শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় হল দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া।
শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়
একজন নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টিকা দেওয়া হয়। শিশু জন্মের পর আশেপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। যেমন হাম, হুপিংকাশি, জল বসন্ত, যক্ষা, পোলিও টিটেনাস ইত্যাদি এইসব মারাত্মক রোগ থেকে টিকা শিশুকে সুরক্ষিত রাখে। এসব টিকা নবজাতক থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরীদের দিয়ে থাকে। কোনভাবে শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় অতি তাড়াতাড়ি গিয়ে শিশুকে টিকা গ্রহণ করা।
শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় তা বাড়ির সদস্যদের জানতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে শিশুকে টিকা দিতে হবে। শিশু জন্মানোর ছয় সপ্তাহ কিংবা মাস দেড় মাস বয়স থেকে টিকা দান কর্মসূচি শুরু হয়। একটি শিশুকে কতডোজ টিকা দিতে হবে, কতদিন পর পর টিকা দেওয়ার নিয়ম শেষ ও বিষয়ে একজন মায়ের সচেতন হতে হবে।
নবজাতক শিশুর প্রথম টিক
নবজাতক শিশুর প্রথম টিকা হচ্ছে মায়ের শালদুধ। এই শালদুধ বাচ্চা কে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াতে হবে। শাল দুধে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, কি, ডি, সি যা শিশুকে দুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রথম তিনদিন যে ঘন দুধ হয় সেটাকেই শাল দুধ বলা হয়। শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য শাল দুধ অনেক উপকারী।
তবে শিশুর জন্মের পরে কিছু দিনের মধ্যে থেকে যে টিকা দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে প্রথম যে টিকা দেয়া হয় সেটা হচ্ছে নবজাতকের জন্য যক্ষা রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিসিজি টিকা। এই টিকাটা জন্মের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া যায় অথবা জন্মের দেড় মাস অর্থাৎ ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় থাকে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই টিকাটা নেওয়া ভালো।
এরপর থেকে পরবর্তী টিকাগুলো ছয় সপ্তাহ থেকে শুরু করা হয়ে থাকে পিসিভি, ওটিভি, ওরাল পোলিও,এম আর ভ্যাকসিন ইত্যাদি অনেকগুলো টিকা ধাপে ধাপে ডোজ পূরণ করতে হয়। এইসব টিকা শিশুকে রোগমুক্ত হতে সহায়তা করে। শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। কেননা শিশুর শিশুর টিকা দেওয়া নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। একটি শিশুর জন্য কিছু কিছু টিকা সারা জীবনের জন্য সুরক্ষা দেয়।
শিশুদের টিকা দেওয়া হয় কেন
শিশুদের টিকা দেয়া কেন হয় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।এমন কিছু রোগ আছে যা শিশু সময়ে তার রোগের ঝুঁকিমুক্ত করে। যে রোগ গুলো একটি শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারে, এইসব রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য মূলত শিশু অবস্থায় রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা দিয়ে থাকে। শিশুর লাইফের যেকোনো সময় এইসব রোগ দেখা দিতে পারে তাই এইসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য শিশুকে অবশ্যই টিকা দিতে হবে।
আসুন জেনে নেই অতীতের কিছু ঘটনা যা একটি শিশুকে শিশু অবস্থায় থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত কতগুলো রোগের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। এবং কত শিশু অকালে দুনিয়া ছাড়তে হয়েছে। গবেষকরা তাই এইসব রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন টিকা বের করেছে।
হামঃ হাম একটি ভয়ানক রোগ। এটি চুলকানি ফুসকুড়ি হিসেবে দেখা দেয় একটি সময় শিশুর অন্ধত্ব এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি সময় পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু এইসব রোগে মারা গিয়েছে।
মাম্পসঃ মাম্পস একটি ভাইরাস সংক্রমণ রোগ। লালাগ্রন্থী ফুলে যায়। একটা সময় প্রায় শিশুরই রোগ হয়ে থাকতো। টিকা দেওয়ার কারণে এখন বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত এই রোগের।
ডিপথেরিয়াঃ ডিপথেরিয়া একটি শিশুর মুখ এবং নাকের ঝিল্লির ফোলা সৃষ্টি হয়। ব্যথা অনুভব হয়, জ্বর হয়, খাওয়া দাওয়ার কষ্ট হয়। এতে করে কিডনি সমস্যা হতে পারে। যা একটি শিশুর জন্য মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ।
পোলিওঃ পোলিও একটি শিশুর, পেশী বা স্নায়ুকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই রোগ কখনো কখনো বুকে কিংবা পায়ে আক্রমণ হয়ে থাকে।শিশুদেরকে রোগের ঝুঁকি থেকে অবশ্যই শিশুকে টিকা টিকা দিন।
যক্ষাঃ যক্ষা রোগকে টিবি রোগ বলা হয়। প্রথমে কাশির মাধ্যমে হয়ে থাকে কাশির সাথে রক্ত পড়ে। ১৯৮০ সালের সময়ে এই রোগ প্রায় ঘরে ঘরে দেখা যেত। যক্ষা রোগে একটা সময় অনেক মানুষ মারা গেছে। এখন বর্তমানে টিকা দেওয়ার কারণে এই রোগ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত।
গুটি বসন্তঃ গুটি বসন্ত আশির দশকের লোকের কাছে একটি ভয়াবহ রোগ হিসেবে পরিচিত। যা কিনা একটি বাড়িতে ঢুকলে প্রতিটা মানুষের এই রোগ হয়ে থাকে। এভাবে গ্রামের সমস্ত মানুষের এই রোগ ছড়িয়ে থাকতো এতে অনেক লোক মারা যেত, আবার অনেক লোক অন্ধত্ব, পঙ্গু, কিংবা সারা শরীর গুটি বসন্তের দাগ রয়ে যেত। বর্তমানে এইসব রোগ আল্লাহর রহমতে থেকে মুক্ত পেয়েছেন।
তাই এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন চিকিৎ চিকিৎসকরা গবেষণা করে এইসব রোগ প্রতিরোধ করার জন্য শিশু অবস্থায় টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইসব টিকা অনেক কার্যকরী যা শিশু অবস্থায় থেকে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা হয়। অনেক সংক্রমক রোগের হতে মুক্ত থাকতে এই ভ্যাকসিনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই আপনার শিশুকে অবশ্যই টিকা দিবেন এবং সচেতন থাকবেন। শিশুর টিকা দিতে দেরি হলে করণীয় বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে। শরীরের রোগের সংক্রমন হওয়ার আগে ক্ষতিকর ভাইরাস ভাবে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুতি ভ্যাকসিন সংক্রমক রোগ ও সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় প্রায় ৮০%। কখনো যদি শরীর জীবাণুর সংস্পর্শে আসে তৎক্ষণাৎ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃ আজকের এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হলে আপনি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেন তারাও শিশু টিকা দান নিয়ে সচেতন হতে পারে। এই আর্টিকেলটি পড়ে তারা যেন উপকৃত হয়।প্রতিদিন আমাদের সচেতন মূলক লেখাগুলো পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।
সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url