মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় বিস্তারিত জানুন

মাছ চাষ করতে গেলে আমাদের মাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে। মাছের রোগ গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় ও প্রতিকার করার জন্য মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি আজকে আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে। মাছের আরও মাছের ঘা সারাতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং রোগের বিষয়ে আপনি জানতে চাইলে অবশ্যই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারন কি
আজকের আর্টিকেলে মাছের রোগের নাম, লক্ষণ, মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ, মাছের ক্ষত রোগ কোন ছত্রাকের কারণে হয়, এইসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ করতে হবে।

মাছের ঘা সারাতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবং মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা মাছের ঘা সারাতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকে আর্টিকেলটি মাছের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেছি। তার সাথে মাছের ঘা সারানোর উপায় গুলো তুলে ধরেছি আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি ভালো করে বুঝতে পারবেন মাছের রোগ সম্পর্কে।
শতকরা ৫% লবণ পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত মাছ সেখানে কয়েক মিনিট ডুবিয়ে রেখে দিবেন।এর পর পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। তুঁতে বা কপার সালফেট প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম দিতে হবে। তাছারাও রাসায়নিক উপাদান যেমন পটাশিয়াম পানিতে মিশাতে পারেন এতে পানি পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত হয়।

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি? আপনি যদি মাছ চাষ করতে চান,  তাহলে আপনাকে মাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং মাছের কি কি কারনে কোন রোগগুলো দেখা দেয়, সেগুলো জানতে হবে এবং এই রোগ থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সেই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। আসুন জেনে নেই আজকে পাশের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি সেই সব বিষয়ে।

মাছের লেজ ও পাখনা পচার কারণঃ এরোমোনাস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সাধারণত এই রোগ হয়। মাছের গায়ে পিচ্ছিল পদার্থ থাকে আর এই রোগ হলে পিচ্ছিল পদার্থটা কমে যায়। মাছের গা ফ্যাকাসে হয়ে যায় লেজি ও পাখনাতে পচন ধরতে থাকে, দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
এই রোগ থেকে বাঁচাতে করনীয়ঃ পুকুরের পানি পরিষ্কার করতে হবে তার জন্য পুকুরের প্রতি শতাংশে এক কেজি চুন ব্যবহার করতে হবে। চুন দিলে পানি পরিষ্কার হয়। মাছের খাবারের সাথে প্রতি কেজি খাদ্যে ২৫ মিলিগ্রাম অক্সিটেট্রা-সাইক্লিন মিশিয়ে প্রতি সাত দিন পর পর দিতে হবে। পুকুরে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয়

মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সুন্দরভাবে পড়ুন। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেই ঔষধের নাম সহ উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। তার আগে আপনাকে জানতে হবে মাছের ঘা কেন হয় কি করলে মাছের ঘা হবে না সেই কাজগুলো করে করতে হবে। বিভিন্ন কারণে মাছের ঘা হতে পারে সে বিষয়গুলো জেনে নেই।

মাছের ঘা এর কারণ ও প্রভাব

  • পুকুরে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণ তৈরি হলে।
  • পুষ্টির অভাব দেখা দিলে।
  • খাদ্যের অভাব দেখা দিলে।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুকুর থাকলে।
  • পরজীবী আক্রমণ করলে।
এ ধরনের ঘা হলে পুকুরে ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পুকুরের মাছের পাখনা বা লেজ পচা ঘা হয়েছে। প্রথমে দুই একটি করে আপনি মাছের গায়ে এ ধরনের রোগ দেখতে পারবেন। ধীরে ধীরে দিনে দিনে আপনার পুকুরের মাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে। আর এ রোগ হলে মাছ বাঁচানো মুশকিল। তাই অল্প থাকতে মাছের ঘা সারাতে রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে।

মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) ব্যবহার করতে হবে। পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাছের ঘা সারাতে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটণেন্ট শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট যা খুবই দ্রুত মাছের ঘা ভালো করে। এবং পানি পরিষ্কার করে।

রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার বিধি কার্যকারিতা
পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট সাধারণত ২-৪ পিপিএম মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। জীবাণুনাশক হিসেবে ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ফরমালিন সাধারণত ১৫-২৫ পিপিএম মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। ঘায়ের আশপাশের অঞ্চল জীবাণুমুক্ত করে।
মেথিলিন ব্লু ২-৩পিপিএম মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। ছত্রাক ও প্রোটোজোয়া জনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
আয়োডিন ৫-১০পিপিএম মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর।
হাইড্রোজেন পেরক্সাইড 3% দ্রবণ ১০০-২০০ পিপিএম মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। ঘায়ের মধ্যে অক্সিজেন প্রবেশ করিয়ে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

সতর্কতা

  • বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা যাবে না ।প্রতিটি রাসায়নিকের জন্য একটি মাত্রা অনুসরণ করতে হবে বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে পিএইচ এর মান পরিবর্তন করতে পারে।
  • ব্যবহার করার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা থাকতে হবে। মার্কস ও চশমা ব্যবহার করতে হবে, হাতে গ্লোভস ব্যবহার করতে হবে।
  • সূর্যের তাপমাত্রা কম থাকা অবস্থায় প্রয়োগ করতে হবে।

মাছের ছত্রাকজনিত রোগের নাম

মাছের ছত্রাকজনিত রোগের নাম
মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি জানার পাশাপাশি মাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় মাছের ছত্রাকজনিত রোগের নাম সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত এবং তার সাথে কোন রোগের কি লক্ষণ এগুলো জেনে রাখা ভালো মাছের যখন রোগ দেখা দিবে তাহলে সহজে বুঝতে পারবে কোন রোগ হয়েছে তার জন্য মাছের রোগের নাম জানতে হবে এবং কি কারণে এই রোগ হয়েছে তা সম্পর্কেও জানতে হবে।
  • সেপ্রোল্গেনিয়াসিস;
  • ইপিজুটিকআরসারেটিভসিনড্রোম;
  • মাছের ক্ষত রোগ;
  • লেজ ও পাখনা পচা রোগ;
  • মাছের পেট ফোলা রোগ;
  • মাছের গায়ে সাদা দাগ রোগ;
  • মিক্সো-বোলিয়াসিস।

মাছের ক্ষত রোগ কোন ছত্রাকের কারণে হয়

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবং মাছের ক্ষত রোগ কোন ছত্রাকের কারণে হয়, জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। চলুন জেনে নেই  কোন ছত্রাকের কারণে মাছের ক্ষত রোগ দেখা দেয়। মানুষের মতো মাছেরও রোগ বালাই হয়। রোগ কিছু কিছু রোগ মারাত্মক অল্প কয়েকদিনেই পুকুরের সমস্ত মাছ মরে যায়।

মাছের বিভিন্ন রকমের রোগ রয়েছে তার মধ্যে ক্ষত রোগ ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রথম এই রোগের শনাক্ত করে। ধীরে ধীরে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মাছ যেমন রুই কাতলা মৃগেল টাকি ইত্যাদি প্রজাতির মাঝে ক্ষত রোগ আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাছের ক্ষত রোগ কোন ছত্রাকের কারণে হয় এফাণোমাইসিস ইনভাডেনস নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।

মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণ

মাছের রোগের লক্ষন
মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবং মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণগুলো কি জানতে চাইলে আর্টিকেলটি পড়ুন। মাছ রোগে ধরলে কিছু লক্ষণ খেয়াল করলে বোঝা যায়।  তাই আপনি যদি মাছ চাষ করতে চান অবশ্যই মাছের রোগ সম্পর্কে এবং রোগের লক্ষণ গুলো কি কি জানতে হবে। তা না হলে আপনি সনাক্ত করতে পারবেন না মাছের কি রোগ হয়েছে।
  • মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়;
  • পরবর্তীতে লাল দাগ গুলো ঘা এবং গর্ত সৃষ্টি হয়;
  • মাছ পানির উপরিভাগে ভারসাম্যহীনভাবে ভেসে বেড়ায়;
  • খাদ্য খাওয়া কমিয়ে দেয়;
  • ক্ষতস্থানে থেকে দুর্গন্ধ এবং পুজ বের হয়;
  • পরবর্তীতে মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে মাছ মারা যায়।

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি জানার পাশাপাশি মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আর্টিকেলের মধ্যে মাছের বিভিন্ন রোগ এবং এর প্রতিকার করণীয় কি সেসব সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনার পুকুরে মাছের যদি ঘা হয় কিংবা শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাহলে আপনি আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে পড়ুন আশা করি এখান থেকে কিছু জানতে পারবেন।
  • প্রথমে আক্রান্ত মাছকে ধরে পানিতে ০.৫%, ১.০%, ২.০% লবণ মিশিয়ে করতে পারে ততক্ষণ মাছকে গোসল করাবেন।
  • ক্ষত আক্রান্ত মাসের দেহের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১০০ মিলিগ্রাম হারে অক্সিট্রেটা-সাইক্লোন ইঞ্জেকশন প্রদান করতে পারেন।
  • মাছের খাবারের সাথে প্রতি কেজি খাদ্যের জন্য ৫০ থেকে ৭৫ মিলিগ্রাম অক্সিটেটা-সাইক্লিন অথবা সালফার জাতীয় ঔষধ ১০০ থেকে ১০০ মিলিগ্রামএক সপ্তা মাছকে খাওয়াতে পারেন ।

মাছের ক্ষত রোগে প্রতিরোধ

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবংমাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয়  মাছের ক্ষত রোগে প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আসুন জেনে নেই মাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে মাছের বিভিন্ন রকমের রোগ হয়ে থাকে তার একটাই কারণ পুকুরের পরিবেশ দূষণ হওয়ার এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ার কারণে রোগের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের নিয়ম নীতিগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এবং মেনে চলতে হবে।
  • মাছের ক্ষত রোগ দূর করার জন্য মাছ ছাড়ার পূর্বে অবশ্যই পুকুর ভালোভাবে শুকিয়ে দিবেন। পুকুরের তলার কাদা তুলে ফেলে দিতে হবে।
  • মাছ ছাড়ার পূর্বে পুকুরের পানির ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবে
  • সুস্থ সবল মাছের পোনা ছাড়তে হবে
  • পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার পূর্বে মাছের কোণাকে শতকরা একভাগ লবণ মিশ্রিত পানির সাথে আধা ঘন্টা গোসল করালে রোগ প্রতিরোধের সম্ভাবনা কম থাকে।
  • পুকুরে পরিমাণ মতো সার ও খাদ্য দিতে হবে।
  • পুকুরের আশপাশে গাছপালার ডাল কেটে ছোট করতে হবে।

মাছের ঘা সারাতে জলে কি ব্যবহার করা হয়

মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবং মাছের ঘা সারাতে জলে কি ব্যবহার করা হয় জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আর্টিকেলটি বিস্তারিত জানতে হবে। মাছের ঘা সারাতে জলে ব্যবহার করতে পারেন লবণ যা পানি পরিষ্কারি এবং পানিতে অক্সিটেট্রা-সাইক্লিন ঔষধ সপ্তাহে একদিন পানিতে দিতে পারেন। তাছাড়া কপার সালফেট জলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম করে দিতে পারেন। তা ছাড়াও আরো পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম করে দিতে পারেন।

আজকের শেষ কথা

মাছ চাষের জন্য মাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে। মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ কি এবংমাছের ঘা সারাতে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয় আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনার যদি আর্টিকেলের মধ্যে থেকে প্রশ্ন সমাধান পেয়ে থাকেন, আর আমার লেখা আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে, তাহলে আমারওয়েবসাইট অবশ্যই ভিজিট করবেন। এবং সেই সাথে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে দিবেন তারাও যেন মাছের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url