কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০দিনের আমল
কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল সম্পর্কে জানা আমাদের অত্যন্ত জরুরী। জিলহজ মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাস। এই মাসের প্রথম দশ দিন অনেক ফজিলতপূর্ণ দিন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা আপনার নফল ইবাদত করা। জিলহজ্জ মাসের তাকবীর ৯ তারিখের দিন সকালে নামাজের পর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ দিনের আসর নামাজ পর্যন্ত। আজকে আর্টিকেলে জিলহজ্জ মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও জিলহজ মাসের আমলের ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে, এই মাসে কয়টি রোজা রাখতে হবে, এই মাসের ক্যালেন্ডার, হজ সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি এইসব বিষয়ে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি পুড়ো অংশ পড়ে আসতে পারেন।
জিলহজ্জ মাসের তাকবীর
কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল আরবি মাসের মধ্যে অন্যতম মাস। এই মাসে হজ পালন করা হয়। মাসের প্রথম ১০ দিন অনেক ফজিলত রয়েছে এই মাসে ঈদুল আযহা পালন করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করা হয়। জিলহজ্জ মাসের তাকবীর বেশি পড়তে বলেছেন নবী করীম (সা:)। জিলহজ মাসে মুমিন মুসলমানদের জন্য ৫ দিনে ২৩ ওয়াক্ত নামাজ তাকবীরে তাশরিক ওয়াজিব আমল রয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বেশি বেশি তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে।
তাকবীরে তাসরিকঃ
- الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
অর্থঃ-‘ আল্লাহ মহান; আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান; আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
তাকদীর সারওয়ার তাহলে একবার তাহমিদ একবার পড়তে হয়। এই আমল গুলো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ন্য। মোটকথা জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ফজিলত পূর্ণ দিন এই ১০ দিনে অনেকেই রোজা রাখে। বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা উত্তম। তাকবীর হলো আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব মহৎ ও বড়ত্ব ঘোষণা করা। তাকবীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল
কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়। প্রথম ১০ দিনের রোজা আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মত। ( তিরমিজি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৮)। এই দশ দিন যে যেভাবে আমল করে আল্লাহতালা কবুল করে নেয়। জিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের আমল গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। আপনি যদি জানতে চান, জিলহজ মাসের আমল সম্পর্কে তাহলে আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
১. তওবাঃ তওবা অর্থ ফিরে আসা। পাপকর্মের উপর অনুতপ্ত হয়ে লজ্জিত হয়ে সেই কাছ থেকে ফিরে আসা এবং কখনো ঐ কাজে লিপ্ত না হওয়ার দূর পরিকল্পনায় তওবা। আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন। তাই আমাদের বেশি বেশি করে তওবা করতে হবে।
২. ফরজ ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আমল করাঃ আল্লাহর যেকোনো ইবাদত আদব ও গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। জিলহজের এই ১০ দিন বেশি বেশি করে ফরজ ও নফল ইবাদত করা। শাওবান (রা:) আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তুমি বেশি বেশি করে সিজদা কর কারণ তুমি এমন যেকোন সিজদায় করো না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার কোন ক্ষমা করে দিবেন। তাই নিয়মিত ফরজ ওয়াজিব সমূহ আদায়ের জন্য যত্নবান হও।
৩. রোজা রাখা সিয়াম পালন করাঃ জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। অন্যান্য দিনের চেয়ে এই দিন গুলোতে সিয়াম পালন এর উপর যত্নশীল হওয়া। ঈদের দিন ছাড়া বাকি নয় দিন রোজা রাখা।
হাফসা (রা:) আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা:) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। তাহলে আশুরার সওম, জিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ফজরের পূর্বে দুই রাকাত সালাত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,“ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, একদিনের রোজার বিনিময়ে তার চেহারা কি জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ খারিফ দূরে রাখবে।”
৪. হজ্জ ও ওমরা করাঃ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতদেরকে দুইটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত করার উৎসাহ দিয়েছেন। তা হল-“ যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোন অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোন ভাবে লিপ্ত হয়নি সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল যেদিন তার মাথা তাকে প্রসব করেছে।”
৫.আল্লাহর জিকিরঃ জিলহজ মাসে বেশি বেশি করে আল্লাহর জিকির করতে হবে। এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
৬. তাকবীর, তাহলীল, তাহমিদঃ (আল্লাহু আকবার), ( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), (আলহামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি আমল করতে হবে।
৭. জিল্লাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখাঃ হজ্ব পালনকারী ছাড়াও অন্যান্যরা এই দিনে রোজা রাখতে পারবেন। আবু কাতাদাহ (রা:) বলেন, রাসুল(সা:) কে জিলহজের প্রথম ১০ দিন রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী ইহা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হবে।”
৮. চুল নখ মোচ, নাভির নিচের লোম না কাটাঃ এক্ষেত্রে হযরত উম্মে সালাম(রা:) হতে বর্ণিত নবী করিম (সা:) বলেছেন, “ তোমরা যদি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে যেন সুইচ চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।” ( সহীহ মুসলিম হাদিস ১৯৭৭)
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর কুরবানী করা আগ পর্যন্ত চুল এবং নাভির নিচে লোম ইত্যাদি না কাটা এটাও একটি আমল। যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সক্ষম নয় সেও এ আমল গুলো করতে পারবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বরং সেদিন তুমি তোমার চুল কাটবে নখ কাটবে, নিচের লোক পরিষ্কার করবে এটাই তোমার আল্লাহর কাছে পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।” (সুনানে নাসায়ী, হাদিস: ৪৩৬৫)
৯. জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রোজাঃ জিলহজ্জ মাস একটি ফজিলত পূর্ণ মাস এই মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা- সিয়াম পালন করা, রোজা রাখা নফল ইবাদত করা উত্তম। তবে জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রোজা সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ দিন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ আরাফাতের দিনের ৯ তারিখের রোজার বিষয়ে আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাও মিটিয়ে দিবেন।” ( সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)
জিলহজ্জ মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪
হিজরী তারিখ- বার- ইংরেজি তারিখ
১- জিলহজ -১৪৪৫- শনি - ৮- জুন- ২০২৪
২- জিলহজ -১৪৪৫- রবি - ৯- জুন- ২০২৪
৩ -জিলহজ -১৪৪৫- সোম- ১০- জুন- ২০২৪
৪- জিলহজ -১৪৪৫- মঙ্গল - ১১- জুন- ২০২৪
৫ -জিলহজ -১৪৪৫- বুধ - ১২- জুন- ২০২৪
৬ -জিলহজ -১৪৪৫- বৃহস্পতি- ১৩- জুন- ২০২৪
৭ -জিলহজ -১৪৪৫- শুক্র- ১৪- জুন- ২০২৪
৮ -জিলহজ -১৪৪৫- শনি- ১৫- জুন- ২০২৪
৯ -জিলহজ -১৪৪৫- রবি- ১৬- জুন- ২০২৪
১০- জিলহজ -১৪৪৫- সোম- ১৭- জুন- ২০২৪
১১- জিলহজ- ১৪৪৫- মঙ্গল- ১৮- জুন- ২০২৪
১২- জিলহজ- ১৪৪৫- বুধ- ১৯- জুন- ২০২৪
১৩- জিলহজ - ১৪৪৫- বৃহস্পতি- ২০- জুন- ২০২৪
১৪- জিলহজ- ১৪৪৫- শুক্র- ২১- জুন- ২০২৪
১৫- জিলহজ- ১৪৪৫- শনি- ২২- জুন- ২০২৪
১৬- জিলহজ- ১৪৪৫- রবি- ২৩- জুন- ২০২৪
১৭- জিলহজ- ১৪৪৫- সোম - ২৪- জুন- ২০২৪
১৮- জিলহজ- ১৪৪৫- মঙ্গল - ২৫- জুন- ২০২৪
১৯- জিলহজ- ১৪৪৫- বুধ - ২৬- জুন- ২০২৪
২০- জিলহজ- ১৪৪৫- বৃহস্পতি- ২৭- জুন- ২০২৪
২১- জিলহজ- ১৪৪৫- শুক্র- ২৮- জুন- ২০২৪
২২- জিলহজ- ১৪৪৫- শনি- ২৯- জুন- ২০২৪
২৩- জিলহজ- ১৪৪৫- রবি- ৩০- জুন- ২০২৪
২৪- জিলহজ- ১৪৪৫- সোম- ১- জুলাই- ২০২৪
২৫- জিলহজ- ১৪৪৫- মঙ্গল- ২- জুলাই- ২০২৪
২৬- জিলহজ- ১৪৪৫- বুধ - ৩- জুলাই- ২০২৪
২৭- জিলহজ- ১৪৪৫- বৃহস্পতি- ৪-জুলাই- ২০২৪
২৮- জিলহজ- ১৪৪৫- শুক্র- ৫- জুলাই- ২০২৪
২৯- জিলহজ -১৪৪৫- শনি - ৬- জুলাই- ২০২৪
৩০- জিলহজ- ১৪৪৫- রবি- ৭- জুলাই- ২০২৪
জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি ২০২৪
জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি ২০২৪? বিষয়টি জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল অনেক বেশি। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বেশি বেশি আমল করতে হয়। জিলহজ্জ মাসে চাঁদ দেখা দিলে রোজা রাখা সুন্নত। এই মাসের প্রথম ৯দিন রোজা রাখতে হয় এই রোজা রাখা সুন্নত। এই রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই মাসের ৯ তারিখে অর্থাৎ আরাফার দিন রোজা রাখলে গত এবং আগামী ১ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফার দিন রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি এর মাধ্যমে বিগত এক ও আগামী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। ( মুসলিম হাদিস ১ হাদীস: ১১৬২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘ তোমরা এক একটি রোজার বিনিময়ে ১১০ আজাদ করার, ১০০ দান করার, এবং জিহাদের সাথে সজ্জিত একটি ঘোড়া জেহাদের জন্য দান করার সওয়াব হবে।’ (মুকাশাফাতুল কুলুব, ইমাম গাজ্জালী)
কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল প্রথম ৯ দিন বা ৯ টি রোজা রাখতে হবে। তার মধ্যে ৯ তারিখের রোজা অর্থাৎ আরাফের দিনের রোজা বেশি ফজিলতপূর্ণ। তাই আমরা মুসলিম হিসেবে চেষ্টা করব এই আমলগুলো অবশ্যই করার। এর মাধ্যমে আল্লাহ্তাআলা আমাদের আগে পিছনে গুনাহ গুলো মাফ করে দিবেন।
জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত
ইবাদত বন্দেগীর মাস হিসেবে জিলহজ মাস অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে এক একটি রোজার বান্দাকে তার বদলাতে গত বছরের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন। জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন এবং কোরবানির পরে দুই দিন তাকবীর তাহলিল তাহমিদ বেশি বেশি আমল করা অনেক সওয়াবের কাজ।কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল প্রথম দশকের শুরু থেকে কুরবানী পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ দিন দশটি আমলের কথা উল্লেখ করা রয়েছে।
আমলগুলো হলো ১. বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা আল্লাহর ইবাদত করা। ২. বেশি বেশি ভালো কাজে, নেক আমলের প্রতি যত্নশীল হওয়া। ৩. সমর্থবান হলে হজ পালন করা। ৪. নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে কোরবানি করা। ৫. কোরবানির দিন নখ চুল অবাঞ্ছিত লোম কাটা। ৬. জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন পাপ না করার প্রতি সতর্ক থাকা। ৭. তাকবীর ,তাহলিল, তাহমিদ পাঠ করা। ৮. ৯তারিখে ফজর থাকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। ৯. আরাফাতের দিন রোজা রাখা। ১০. ঈদুল আযহা অর্থাৎ কোরবানির দিন পালন করা।
ফজিলতঃ কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল এর অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ আল্লাহর কাছে প্রথম ১০ দিনের নেয় উত্তম ও মহান দিন আর নেই।” ( সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৮৫৩)
- জিলহজ মাস সম্মানিত একটি মাস, অন্যান্য মাসের মধ্যে এই মাসটি অন্যতম একটি মাস।
- এই মাসের প্রথম দশ দিন অনেক মর্যাদা পূর্ণ একটি সময়।
- ৯ তারিখের রোজা অধিক সওয়াব রয়েছে।
- আরাফাতের দিনের একটি সিয়াম গত দুই বছরে পাপের কাফফারা হয়ে যায়।
- ১০ তম দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবানি করা।
- জিলহজ মাসের দশ দিনের আমল মহান আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়।
- এই মাস হজের মাস, ত্যাগ স্বীকারের মাস, প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মাস।
- রমজান মাসের পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এর একটি মাস হলো জিলহজ্জ মাস।
হজের শর্ত ও ওয়াজিব সমূহ
হজের শর্ত ও ওয়াজিব সমূহ বিষয়গুলো জানা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজের শর্ত ও ওয়াজিব সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। আপনি যদি এইসব বিষয়গুলো জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে প্রথম থেকে শেষে থাকুন। আসুন আমরা জেনে নেই কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল সম্পর্কে ও হজের শর্ত ওয়াজিব সমূহ।
হজের শর্তঃ
১. মুসলিম হওয়া
২. জ্ঞান সর্ম্পূন্ন হওয়া
৩. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
৪., স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না থাকা।
৫. আর্থিক দিক দিয়ে সমর্থ্যবান হওয়া।
হজের ওয়াজিব সমূহঃ হাজের ওয়াজিব সাতটি। সেগুলো হলঃ-
১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদা লিফা নামে স্থানে দশ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছুক্ষণ অবস্থান করা।
২. সাফা ও মারওয়া দৌড়ানো বা সাঈ করা।
৩. ১০, ১১, ১২ জিলহজ্জ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা।
৪. তামাত্তু ও কিরণ হজে দমে শোকর করা।
৫. মাথার চুল মুন্ডন করা বা কেটে ছোট করা।
৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা।
৭ .পবিত্র মদিনা শরীফে পৌঁছে নবী করীম(সাঃ) রওজা জিয়ারত করা।
হজ কয় প্রকার ও কি কি
হজ কয় প্রকার ও কি কি তা জানতে চাইলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমরা হজ কয় প্রকার ও কি কি এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জিলহজ মাসে ঈদুল আযহা বা কোরবানিতে হজ পালন করা হয়।হজ সর্ম্পকে বিস্তরিত জানতে চাইলে পুরো আর্টিকেলটি ধর্য ধরে পড়তে থাকুন।
তিন প্রকারঃ তামাত্তু, ইফরাদ, কিরান। কিরান সর্বাধিক উত্তম তারপর তামাত্তু এরপর ইফরাদ।
এর মধ্যে তামাত্তু্ হজ পালন করা সব থেকে সহজ। তামাত্তু অধিক বাংলাদেশী আদায় করে থাকেন। কিরান হাজীদের সংখ্যা খুবই কম।
কিরান হজঃ মিকাত থেকে একসঙ্গে ওমরাহ ও হজের নিয়তে ইহরাম বাধাকে কিরান বলে।
ইফরাদ হজঃ মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাধাকে ইফরাদ হজ বলে।
তামাত্তু হজঃ মিকাত থেকে শুধু ওমরাহ নিয়তে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ করার পর ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করা এবং জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখে ইহরাম বেঁধে হজ্ব সম্পূর্ণ করা তাকে তামাত্তু হজ বলে।
হজের ফরজ কয়টি ও কি কি
হাজের ফরজ তিনটি
১. ইহরাম বাঁধা
২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা।
ওমরা করার নিয়ম
১. ওমরাহুর ইওরাম(ফরজ)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল বা ওযু করে নিতে হবে। সেলাই বিহীন সাদা কাপড় পরিধান করুন অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন। নিয়ত করে তিনবার তালবিয়া-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল বা ওযু করে নিতে হবে। সেলাই বিহীন সাদা কাপড় পরিধান করুন অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন। নিয়ত করে তিনবার তালবিয়া-
لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك ان الحمد والنعمه لك والملك لا شريك لك -(লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা)পড়ে নিতে হবে।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, আমি হাজির, তোমার কোন অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, তোমারই রাজত্ব, তোমার কোন অংশীদার নেই।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, আমি হাজির, তোমার কোন অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, তোমারই রাজত্ব, তোমার কোন অংশীদার নেই।
২. ওমরাহর তাওয়াফ(ফরজ)
ইজতিবা সহ তাওয়াফ করুন। ইহারামের চাদর কে ডান বগলের নিচ থেকে পেঁচিয়ে কাদের উপরে রাখায় হল ইজতিবা।
হাযরে আসওয়াদকে সামনে রেখে ডান পাশে দাড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। তারপর ডানদিকে গিয়ে এমন ভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাযরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে, এরপর হাত তুলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দিন হাযরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খান।এরপর ডান দিকে চলতে থাকুন প্রথম তিন চক্কর রমল করা পুরুষের জন্য সুন্নত (অর্থাৎ- বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁদ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম ফেলে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া)।
ওমরার ওয়াজিব কয়টি
ওমরার ওয়াজিব কয়টি? কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমর্থক থাকলে হজ পালন করা ফরজ তাই এসব বিষয়গুলো জানা জরুরী। ওমরার দুইটি কাজ ওয়াজিব।
- প্রথমটি হল সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী সবুজ বাতি স্থানে সাতবার সাঈ করা।
- দ্বিতীয়তটি মাথার চুল ছোট করা।
৯ জিলহজ্জ আরাফার দিন
৯ জিলহজ্জ আরাফার দিন, এই দিন সিয়াম পালনের দিন এই দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। ৯তারিখ ইসলামের একটি পবিত্র দিন। এই দিনে পূর্ণতা লাভের দিন, রমজান মাসের ৭০ দিন পর এই দিনটি আসে। আরাফাতের দিন রোজা রাখা উত্তম। আরাফার দিবস মুসলমানদের উপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। আল্লাহতাআলা আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস। আরাফার দিবসে তার বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি যার নাম থেকে মুক্তি দেন।
হযরত আয়িসা (রা:) আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“ আরাফাতের দিবসের চেয়ে বেশি আর কোন দিবসে আল্লাহ মানুষকে অবনতি মুক্তি দেন না এই দিন দিনে নিকটবর্তী হয় এবং তার ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন এই মানুষগুলো কি চায়?” ( সহিহ মুসলিম শরীফ)
আজকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল আজকে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। জিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফজিলত পূর্ণ দিনগুলো ও তার সাথে জিলহজ্জ মাসের পুরো ক্যালেন্ডার। আরো হজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকের আর্টিকেলে অনেক কিছু জানার বিষয় ছিল। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং একটু হলেও উপকার এসেছে।
আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যেসব বিষয় ভালো লেগেছে সেগুলো অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এবং পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আর অবশ্যই প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য।
সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url