বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি - শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এবং শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তা অবশ্যই জানতে হবে। শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো সহ তুলে ধরা হয়েছে।
আরো বিস্তারিতভাবে শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়, ওর স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সহ আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ে আসতে পারেন আশা করি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
গ্রীষ্মের সময়ে বর্ষাকালে প্রায় দেখা যায় মানুষে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তাই মানুষকে ডায়রিয়া থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। ডাইরিয়া রোগে পানি শূন্যতা হয়ে থাকে হলে রোগী দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সঠিক চিকিৎসা দেওয়া জরুরী।
শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তার পাশাপাশি শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এবং শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো আগে জানতে হবে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলো না জেনে থাকেন তাহলে কি করে বুঝবেন শিশুর ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা হচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনাকে সচেতন হতে হবে শিশুর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে।
আসুন জেনে নেই শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো-
- শিশুর যখন ডায়রিয়া হতে থাকবে তখন শিশুর মুখ শুকিয়ে যাবে, ঠোঁটগুলো শুকনো হয়ে যাবে
- চোখ মুখ বসে যাবে, এবং শিশুর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে না কান্নাকাটি শুরু করবে।
- ঠিকমতো খেলতে চাইবে না, বাচ্চা সব সময় কোলে থেকে নামতে চাইবে না বিরক্ত বোধ করবে।
- পানি শূন্যতার কারণে চোখ শুকনো দেখাতে পারে। কান্নাকাটির ফলেও চোখ থেকে পানি বের হয় না।
- পানি শূন্যতার কারণে শিশুর প্রসাব হলুদ হয়ে যায়। প্রসাবে জ্বালাপোড়া করে।
- শরীরের ক্লান্তি অনুভব করে এবং ঝিমিয়ে যায়।মাথা ঝিম ধরে থাকে ফলে বাচ্চা মাথা উঁচু করে খেলা করতে চায়না।
- ডায়রিয়া হলে ছোট বাচ্চাদের শ্বাস-প্রশ্বাস হার্টবিট বেড়ে যায় ফলে বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করেন।
- শিশুর মাথার উপরে যে তালু নরম থাকে সেটা বসে যায় এবং ঘনঘন লাফাতে থাকে।
- শিশুদের বা বড়দের সকলের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে কি শুরু প্রায় সবসময় লেগেই থাকে যেমন পাতলা পায়খানা একটুতেই হয়ে যায়। কারণ বাচ্চারা খেলাধুলা করে রোগী জীবানু বিভিন্নভাবে পেটে চলে যায় সেক্ষেত্রে পেটে হজম শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটে হয়ে যায়। তাই শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি জানা ও শিশুদের জন্য পাতলা পায়খানা থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের প্রতি যত্নবান বেশি হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
ঘরোয়া উপায় এর মাধ্যমে শিশুদের পাতলা পায়খানা দূর করা যায় তবে বেশি অতিরিক্ত হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে নেওয়াই ভালো। যেহেতু বদলা শিশুদের পাতলা পায়খানা একটুতেই হয়ে থাকে তাই কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যায় আসুন জেনে নেই ঘরোয়া উপায় গুলোর মাধ্যমে শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করা।
ধরুন রাতের বেলায় হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে গেছে বাচ্চার সেক্ষেত্রে এখন হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা নেই, তাহলে কি করবেন? তাহলে ঘরোয়া উপায় গুলো যেন অবশ্যই জরুরি। ঘরোয়া ভাবে বাসাতেই স্যালাইন তৈরি করে খাওয়ান। পানি ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিন তারপর ঠাণ্ডা করে তার ভেতরে এক চামচ চিনি এবং তিন আঙ্গুলের ডগা দিয়ে এক চিমটি লবণ তুলে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করে খান।
তাছাড়াও কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাকে ভাতের মার, চিড়ার পানি, পাশাপাশি বাচ্চাকে ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ান। এতে করে বাচ্চার ডায়রিয়া কমে যেতে পারে।
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এক্ষেত্রে আমি বলব প্রথমে আপনাকে পানি শূন্যতা দূর করার জন্য আপনি ওর স্যালাইন গুলিয়ে খাইয়ে দিন। তাছাড়া পাশাপাশি তরল খাবার খাওয়ান যেমন ভাতের মার, আতপ চালের জাও খাওয়াতে পারেন, চিড়া ভেজানো পানি ইত্যাদি খাওয়াবেন এতে পানি শূন্যতা দূরত্ব কমে যাবে।
ডায়রিয়া বা ঘনঘন পাতলা পায়খানা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে একটা সময়ই বিছানা থেকে উঠতে চায় না। তাই ডাইরিয়া হলে সময় হতো ব্যবস্থা নিতে হবে তা না হলে মারাত্মক হয়ে যাবে। পানি শূন্যতার অভাবে শরীরের কোষগুলো কাজ করবে না। তাই যেসব খাবারে ডায়রিয়া কমে সেইসব খাবার খেতে হবে। আসুন জেনে নেই ডায়রিয়া হলে করণীয় কি খাবার খাওয়া যায়।
বড়দের ডাইরিয়া হলে যেসব খাবার খাবেন-
- ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তার জন্য আপনাকে স্যালাইন পানির পাশাপাশি তরল যুক্ত খাবার খেতে হবে।
- ডায়রিয়া অতিরিক্ত হলে হয়ে গেলে বেশি বেশি তরল খাবার খাবে যেমন চিড়া ভেজানো পানি, আতপ চালের জাও, ভাতের মার, তরল সবজি খাবেন। ভাতের মারে পুষ্টি রয়েছে বেশি অনেক উপকার আসবে।
- ডাইরিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য থেকে দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস তরলযুক্ত খাবার খাবেন।
- যতবার টয়লেট থেকে আসবেন ততবার আসার পর স্যালাইন মেশানো পানি খাবেন। এতে পানি ঘাটতি পূরণ হবে।
- ছোট মুরগি জোল করে রান্না করে সেই ঝোল খাওয়াবেন এতে উপকার হবে।
- ডায়রিয়া হলে ডালিম এর জুস করে খাওয়াতে হবে এতে অনেক উপকারে আসে। তাছাড়া ফলের জুস করে খাওয়াবেন।
শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তা জানার পাশাপাশি তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এই বিষয়গুলো জানা জরুরি। কারণ শিশুরা বলতে পারেনা আর বড়রা ডায়রিয়া হওয়ার আগে তা কেমন হচ্ছে লক্ষণগুলো বুঝতেও পারে না। তাই আসুন জেনে নেই শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সেই সব বিষয়ে
শিশুদের ছোটখাটো তারপর একটা লেগেই থাকে তার মধ্যে হচ্ছে ডায়রিয়া একটি কারণ তাদের পেট খারাপ একটুতেই হয়ে যায়। তাই শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় গুলো অবশ্যই পালন করতে হবে। তাদের পেট ব্যথা করে এবং বমি বমি ভাব আসে তাই তাদের নিরাময় করতে যেসব খাবার ডায়রিয়া বেশি করে সেসব খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে।
ডায়রিয়া হলে পানি শূন্যতা হয়ে পড়ে। তাই পানি শূন্যতা রোধ করতে শিশুকে ওর স্যালাইন খাওয়াতে হবে।শিশুর পাতলা পায়খানার সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তাই পানি শূন্যতা পূরণ করতে রোগীকে ওর স্যালাইন গুলে খাওয়াতে হবে। আর দ্রুত ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। ওর স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম জেনে অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা যদি একটু বড় হয় যেমন সবজি খেতে পারে সেসব বাচ্চাকে তরল জাতীয় খাবার খাওয়াবেন। তাছাড়া একদম ছোট শিশুকে স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের দুধে যথেষ্ট। তবে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।
আপনি যদি মনে করেন শিশুকে কিংবা বড়দের ক্ষেত্রেও বাড়িতে স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াবেন সেক্ষেত্রেও উপকার পাবেন স্যালাইন তৈরি করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি গ্লাসে পানি নিতে হবে এক চা চামচ চিনি এবং তিন আঙ্গুলের ডগা দিয়ে এক চিমটি লবণ নিবেন ভালোভাবে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করে খেয়ে নিবেন।
ওরস্যালাইন খাওয়ার নিয়ম
একটি ওর স্যালাইন হাফ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াতে হবে ৬ঘন্টা পার হয়ে গেলে তা ফেলে দেবেন। আবার নতুন করে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়াতে হবে।কখনো পানির পরিমাণ কমিয়ে মুখের স্বাদ অনুযায়ী খাবেন না এতে হেতে বিপরীত হবে। স্যালাইন খালি পেটে না খাওয়াই উত্তম। শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এর মধ্যে এটি একটি। শিশকে অল্প অল্প করে কিছুক্ষন পরপর স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ঘরোয়া ভাবে ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত
ডায়রিয়া হলে ঘরোয়াভাবে কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে এতে করে খানিকটা হলেও উপকার আসবে। তবে ঘরোয়া ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি যদি না কমে বমি হতে শুরু হয় এবং পাতলা পায়খানা আরো বেশি হলে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তার আগে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করা উচিত। আসুন জেনে নেই ঘরোয়া ভাবে ডায়রিয়া হলে কি খাওয়াবেন।
- ডায়রিয়া কমাতে ডালিম এর পাতা খুবই উপকারী অনেকেই ডালিমের পাতা কিংবা শিকড় বেটে রস করে খাইয়ে থাকে এতে অনেক উপকার আসে।
- মসলা ছাড়া তরল যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
- আদা চা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং পেট খারাপ সারিয়ে তোলে।
- পুদিনা পাতা পেইড খারাপ কমাতে পুদিনা পাতা খাওয়া উপকার রয়েছে।
- চা পাতা খেলে ডাইরিয়া কমে যায়।
ডাইরিয়া হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত
ডায়রিয়া হলে আগে ওষুধ না খাইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। এতেও যদি না কমে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে আর ডায়রিয়া হলে ওষুধ খাওয়াতে পারেন জিংক ট্যাবলেট এতে বাইরে অনেকটা কমিয়ে দিবে তাছাড়া বড়দের খেতে ফ্লাজিলট্যাবলেট খেলে ডায়রিয়া কমে যায়। ডায়রিয়া হলে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে এক্ষেত্রে সাধারণত একটি প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
অবশ্যই ও যে সব ওষুধ খাওয়াবেন শিশু বাচ্চা এবং বড়দের ক্ষেত্রে ওষুধ ভিন্ন ভিন্ন থাকবে। তাই না জেনে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কখনোই ওষুধ খাবেন না। অনেক সময় দেখা যায় ডায়রিয়া বন্ধ করার জন্য ওষুধ খেলে পায়খানা আটকে যায়,গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।
দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এসব জানার পাশাপাশি অনেকেরই দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কি ধরনের চিকিৎসা নিতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় চার পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ীও ডায়রিয়া হতে থাকে এতে করে পানি শূন্যতা কমে যায় রোগী আরো মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া মুক্ত করতে অবশ্যই ওষুধ সেবন করতে হবে।
যেখানে পানি শূন্যতা দেখা দিলে শরীরের কোষগুলো ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে রোগী মারাত্মক অবস্থা ধারণ করে। তাই কোন রোগী ছোট নয় অবহেলা করা নয় অবহেলা করার কারণে যদি আপনার দীর্ঘ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট গুলো অবশ্যই মেনে চলবেন যে সব খাবারের ডায়রিয়া বেশি হয় ওইসব খাবার বর্জন করবেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এবং শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এসব বিষয়ে জেনেছেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন তারাও যেন ডায়রিয়া সম্পর্কে আর্টিকেলটি পড়ে একটি হলেও জানতে পারে, বুঝতে পারে যে ডায়রিয়া হলে কি করনীয়। আর প্রতিনিয়ত সবার আগে নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন তাহলে আপনি সবার আগে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url