কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম - তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
তুলসী গাছ খুবই উপকারী একটি গাছ এই গাছের পাতার রস থেকে কাশির ওষুধ তৈরি হয়। আপনি কিংবা আপনার বাচ্চা কে কাশির জন্য তুলসী পাতার রস খাওয়াতে চান। তাহলে কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। আবার শিশুদের তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম জানা অবশ্যই দরকার কারণ এ সময়ে শিশুদের ঘন ঘন কাশি সর্দি জ্বর লেগে থাকে তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে তুলসি রস খাওইয়া থাকে।
এছাড়াও ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার রস ব্যবহার ও তুলসী পাতার চায়ের উপকারিতা আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তুলসী পাতার রস এর বিস্তারিত জানতে চাইলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ ধৈর্য ধরে পড়ে আসুন।
ভূমিকা
তুলসী গাছ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। তুলসী গাছ একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের উপকারিতা অনেক। এই গাছের পাতার রস খেলে কাশি আরো অন্যান্য রোগ ভালো হয়। কাশির জন্য এটি খুবই উপকারী। তুলসী পাতার রস ও মধু মিশিয়ে কাশি জন্য খেয়ে থাকে। তাছাড়া হিন্দু ধর্মে তুলসী গাছের পূজা করে থাকে। এ গাছের সুগন্ধি অনেক সুন্দর।
তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম Ocimum Sanctum । এটি একটি ঔষধি গাছ। তুলছি গাছের তুলনা হয় না। তুলসী পাতার রস কাশি ভালো হওয়ার খুবই কার্যকারিতা ওষুধ। এবং এর সুগন্ধিও অনেক সুন্দর। হিন্দু ধর্মে তুলসী গাছের পূজা করে।
তুলসী গাছের আকৃতিঃ তুলসি গাছ দুই থেকে তিন ফুট হয়ে থাকে। ডালপালা গজায় পাতা সবুজ কালার, কতগুলো খয়রি কালার হয়ে থাকে। পাতা২/৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। , ডগায় ফুল হয় ফুলের লম্বা ৪/৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এত অসাধারণ সাহাজালা গন্ধ পাতা ও ফুলের থেকে পাওয়া যায়। বাড়িতে অক্সিজেন তৈরি করতে তুলসী গাছের তুলনা হয় না এটি অক্সিজেন ভান্ডার।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানা দরকার। আমার মা আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি একটু কাশি হলে তুলসী পাতা ছিঁড়ে এনে রস খাইয়ে দিত। তাতে কাশি ভালো হয়ে যেত আলাদা কোন সিরাপ খাওয়াতো না। শুনছি তুলসী পাতার শিশুদের কাশির জন্য খুবই উপকারী একটি ঔষধ। এটি একটি ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট। এমনকি কাশির সিরাপে তুলসী পাতার ছবি দেওয়া থাকে। আপনার শিশুকে তুলসী পাতার রস করে খাওয়াতে পারেন এতে অনেক উপকার।
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে শরীরে তাপমাত্রার উপর প্রভাব পড়ে। ফেলে বাচ্চাদের একটুতেই সর্দি জ্বর কাশি শুরু হয়ে যায়। কাশি কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে মায়েরা তুলসী পাতার রস খাইয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই তুলসী পাতার রস কিভাবে শিশুকে খাওয়াবেন এবং কাশি ভালো করার জন্য শিশুদের তুলসী পাতার খাওয়ার নিয়ম গুলো জানা দরকার। নিচে তুলসী পাতার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
খাওয়ার নিয়মঃ কয়েকটি তুলসী পাতা গাছ থেকে তুলে এনে ভালো করে ধুয়ে রস বের করে নিন।এরপর হালকা গরম করে চোখে খাইয়ে দেন। তুলসী পাতার রস বাচ্চা খালি খেতে না চাইলে সাথে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে উপকারে আসবে।
আরেকটি নিয়মে তুলসী পাতা রস খাওয়াতে পারেনি যেমন তুলসী পাতার রস একটু কিছু গরম করে তার সাথে দারচিনি গুড়া, একটু মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এভাবে দিলে শিশু খেতেও পছন্দ করবে। মধু না থাকলে একটু চিনি মিস করে নিতে পারেন। এতে কাশির পাশাপাশি গলা ব্যথা সর্দি নিরাময় হবে।
আরও পড়ুনঃ
তুলসী পাতা রস বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রমাণিত তারা বলেছেন ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে সর্দি জ্বর কাশি গলা ব্যাথা ঠান্ডা জড়িত কোন সমস্যা হলে এর সমাধান হিসেবে তুলসী পাতার রস খুবই কার্যকরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই হাতের কাছে এমন একটি ওষুধ রাখতে বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বাড়ির ছাদে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য রস খাওয়া খুবই উপকারী এটি শুধু শিশুদের জন্য নয়, বড়দের জন্য উপকার রয়েছে। কাশি হলে যে কোন বয়সের মানুষ খেতে পারবে তুলসী পাতার রস। এইটি ঘরোয়া পদ্ধতি কিন্তু অনেক কার্যকরী একটি ওষুধ সব ধরনের কাশিতে তুলসী পাতার রস উপকারী। কাজের জন্য দিনে দুইবার করে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনে খাবেন।
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মঃ কাশি নিরাময়ের জন্য তুলসী পাতার রস ঘরোয়া একটি কার্যকরী ঔষধ। যেকোনো কাশিতে আপনি তুলসী পাতার রস খাবেন। তার জন্য প্রথমে আপনাকে গাছ থেকে কয়েকটি তুলসী পাতা তুলে এনে থেতে করে রস বের করে নিন। এরপর দুই টেবিল চামচ রস কুসুম গরম করে নিন।
কুসুম গরম রসের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু ও ১/২টি দারচিনি গুড়া মিশে খান। আবার অন্যভাবেও খেতে পারেন তুলসী পাতা সাথে আধা চিমটি হলুদ গুঁড়ো, আধা চিমটি লং পেপার,আধা চিমটি কালো গোল মরিচ, সবকিছু একসাথে ব্লেন্ডার করে রস বের করে নিন।
এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার খাবেন আশা করি কাশি ভালো হয়ে যাবে পাশাপাশি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে গলা ব্যাথা সর্দি জ্বর কমে যাবে। আবার অনেকেই আগে থেকেই সতর্ক থাকে কাশি হওয়ার আগেই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কয়েকটি তুলসী পাতা গাছ থেকে তুলে এনে ধুয়ে মুখে দিয়ে চিবিয়ে রস খায়।
তবে এভাবে খাওয়ার থেকে আগের নিয়মেই খাওয়া ভালো। দিনে দুইবার করে তুলসী পাতার রসের উপাদান খান। এতে মুখের রুচি বাড়বে। মধু না থাকলে একটু চিনি মিস করে নিয়ে খেতে পারেন।
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি জেনে নিন ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার রস ব্যবহার করা কতখানি উপকারী। আপনি আপনার ত্বকের যত্ন নিতে চাচ্ছেন ত্বকে কালো দাগ, ব্রণ লাগছে ভাব হয়ে আছে তাহলে আপনি এগুলো নিরাময় করতে ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারের নিয়মঃ আপনার ত্বকে তুলসী পাতার রস ব্যবহার করতে কিছু নিয়ম রয়েছে আপনাকে আগে নিয়মগুলো জেনে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তার জন্য প্রথমে আপনাকে কয়েকটি তুলসী পাতা ও নিমপাতা বের করে তার সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে ব্রনের ওপর কিংবা কালো দাগের উপর লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ এবং ২০ মিনিটের মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন গোসলের আগে আপনি নিয়মিত ব্যবহার করবেন আশা করি অনেক উপকারে আসবে। খসখসে ভাব দূর হবে।
তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
মানসিক চাপ ও নিশ্চিন্তা কমাতে কার্যকরী তুলসী পাতার রস। ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করে রস। চিকিৎসকের মতে এই পাতার রস সাইনোসাইট ও মাথা ব্যথা নিমেষে দূর করতে পারে। তাছাড়া ঋতু পরিবর্তন সময়ে শিশুর শারীরিক অসুস্থ দেখা যায় সে ক্ষেত্রে আপনি সঙ্গে সঙ্গে তুলসী পাতার রস খাইয়ে দিতে পারেন। তার জন্য কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে।
তুলসী পাতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি তুলসী পাতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম একসাথে জেনে নিতে পারেন। আপনার কাছে ভালো করার জন্য সকালবেলা থেকে উঠে গাছের টাটকা পাতা ছিঁড়ে এনে রস বের করে এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খাবেন এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন খান তাহলে আপনার কাছে ভালো হয়ে যাবে।
তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। আপনার যদি প্রচুর পরিমাণে কাশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি খেতে পারেন তুলসী পাতার রস। আবার অনেকেই তুলসী পাতার চা করে খেয়ে থাকে। তুলসী পাতা এর উপকারিতা কি জানা দরকার। আসুন আমরা জেনে নেই তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা কি কি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তুলসী পাতার চাঃ তুলসী পাতার চা খেলে আপনার সর্দি গলা ব্যথা এবং খুসখুস কাশি জনিত সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া তুলসীপাতার চা খেলে মাথা ঝিম ধরে থাকলে তা কমে। এছাড়াও মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে তুলসী পাতার চা উপকার আসে। ত্বক ভালো রাখতে পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য তুলসী পাতার চা করে খাওয়া দরকার। নিয়মিত চায়ের সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
যেকোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি নিয়মের বাইরে খান তাহলে সেটা আপনার উপকারের পরিবর্তে বিপরীত কাজ করবে। যেমন তুলসী পাতার রস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এটি কাশি নিরাময় করতে ভালো কাজ করে কিন্তু এটি আবার ক্ষতির দিকে রয়েছে। যেমন তুলসী পাতা বেশি পরিমাণ খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, কাশি সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে।
গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতির দিকঃ আরেকটা মারাত্মক দিক হচ্ছে আপনি যদি কোন অবস্থায় কাশি ভালো করতে তুলসী পাতার রস বেশি পরিমাণ খেয়ে থাকে তাহলে আপনার গর্ববোধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই তুলসী পাতার রস জেনে বুঝে কতটুকু কি পরিমান খাওয়া উচিত নিয়ম জেনে তুলসী পাতার রস খেতে হবে। নানাভাবে স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতির দিকঃ গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, তুলসী পাতার রসে রক্তের সরকার মাত্র কমায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলসী পাতা রস খাওয়া যাবেনা।
রক্তের ঘনত্ব হ্রাস করেঃ তুলসী পাতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ এটির রস সেবন করলে রক্ত পাতলা হয় ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। অতিমাত্রায় তুলসী রস খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
যকৃতের ক্ষতিঃ স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাশি নিরাময় করতে আমরা তুলসী পাতার রস খেয়ে থাকি। পাশাপাশি যারা নিয়মিত ব্যথার ওষুধ খান তারা যদি একই সাথে তুলসী পাতা গ্রহণ করেন। তাহলে যকৃত ক্ষতির গ্রস্ত হতে পারে। কারণ শরীরে দুটি একসঙ্গে কাজ করলে যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
দাঁতের দাগঃ তুলসী পাতা না চিবিয়ে রস গেলে খেতে বলেছে এর বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। তুলসী পাতার রসে লৌহ থাকে যা সাবানোর ফলে দাঁতের দাগ তৈরি হয় তাই গবেষকরা চিবিয়ে না খেয়ে গেলে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আজকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে আমরা আর্টিকেলে আলোচনা করলাম তুলসী পাতার রসের উপকারিতা ও ক্ষতিকারক দিকগুলো।কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনে উপকার হলে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন তারাও যেন তুলসী পাতার রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। আর নতুন নতুন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটে অবশ্যই ভিজিট করবেন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য পোস্ট করা হয়।
সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url