দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা - দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা,দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন বর্তমানে খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি অবলম্বন করে রুমের মধ্যে মুরগি পালন করে থাকছে।
এছাড়াও, দেশি মুরগির ডিম কত দিনে ফুটে, ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি মুরগির ডিম ফুটানোর নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এগুলো জেনে রাখা দরকার আর জানতে আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে পড়ে আসুন সম্পূর্ণ।
ভূমিকা
বেকারত্ব দূর করতে মানুষ এখন বিভিন্ন পদ্ধতিতে আয় রোজগার করার চেষ্টা করছে। সাধারণত মানুষ শখের বিষয়ে কয়েকটি মুরগি পালন করে থাকে এখন বর্তমানে এটি একটি ব্যবসা দার করিয়েছেন। তার জন্য মানুষ দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি শুরু করেছে। এতে মানুষ অতি তাড়াতাড়ি অনেক লাভবান হচ্ছে।
খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি
খাঁচায় দেশের মুরগি পালন পদ্ধতি এটি একটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। এখান থেকে অনেক লাভবান হওয়া যায়। খামারের ফ্লোরে থাকা মুরগি থেকে খাওয়া খরচ কম হয় এখানে খাবার নষ্ট করার কোনরকম কারণ নেই। কারণ খাঁচার বাহিরে খাবার দেওয়া থাকে এবং গলা বের করে মুরগিগুলো খাঁচার বাহির থেকে খাবার খায় ফলে খাবার নিচে পড়ে না নষ্ট হয় না।
খাঁচায় রাখা মুরগির পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস এর ব্যবস্থা করা হয়। এতে রোগীর রোগ বালাই কম হয়। কারণ একটি খামারে যখন মুরগি পালে তখন অনেক গুলো মুরগি থাকে যেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, পানির ব্যবস্থা করা হয় এতে করে মুরগির দৌড়াদৌড়িকরার ফলে খাবার ও পানি পড়ে যায় এবং মুরগির মালমাত্র সেখানেই থাকে যায়। ফলে সহজেই রোগ আক্রান্ত হয়।
সেই দিক দিয়ে খাঁচায় মুরগি পালন পদ্ধতিটা খুবই চমৎকার। কারণ খাঁচায় মুরগি পাললে এদের মলমূত্র নিচে পড়ে যায় এবং খাঁচার তলা শুকনো থাকে, মুরগি শুকনোর মধ্যে থাকে। ফলে মুরগি সহজে অসুস্থ হয় না, সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না এতে করে মুরগি সুস্থ থাকে এবং মুরগি ডিমও ভালো দেয় এবং মাংসর দিক দিয়ে বেশি হয়।
খাঁচায় মুরগি পালন পদ্ধতি প্রথমে আপনাকে একটি রুমের মধ্যে কতগুলো মুরগী রাখার জন্য লোহার কিংবা কাঠের হোক খাঁচা বানাতে পারেন। এতে আলো বাতাস পরিপূর্ণ থাকতে হবে রুমের মধ্যে যেন আলো বাতাস যেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।সেখানে খাবার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং অবশ্যই মলমূত্র পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
খাঁচার ভেতরে ঠাসাধি করে মুরগি রাখা যাবে না এমন ভাবে রাখতে হবে যেন তারা দৌড়াদৌড়ি করা জায়গা পায়। বেশি ঠাসাঠাসি করে রাখলে মুরগি একটু ডানা ঝপটাতে পারবে না, মুরগি ডিম দিলে জায়গার অভাবে ডিমগুলো দৌড়াদৌড়ি করায় পা দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। খাঁচাতে অবশ্যই ডিম দেয়া মুরগি আলাদা রাখতে হবে কারণ এদের খাবারের ব্যবস্থা একটু বেশি রাখতে হয়।
দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা
মুরগি ডিম দেওয়ার সময় তাদের খাবারের পরিমাণটা বেশি দিতে হবে এবং আবার কম হলে মুরগি ডিম কম দেয় এবং ডিম ছোট হয়, খোসা শক্ত হয় না নানা সমস্যায় তৈরি হয় অনেক সময় পেটের ভেতরে ডিম ভেঙে যায়। তাই ডিম দেওয়ার শুরু থেকে মুরগিকে পুষ্টিমানের খাবার খাওয়াতে হবে। আবার সে মাথায় রাখতে হবে দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা অন্য মুরগি থেকে আলাদা হতে হবে এখানে পুষ্টিগুণ বেশি থাকতে হবে।
ডিম পাড়া মুরগিকে ফিট খাওয়াতে চাইলে এতে খাবারের খরচ বেশি হয়ে যায় তাই মাথায় রাখতে হবে। যাতে করে খামারের খরচ কম হয় এবং মুরগিও সঠিক মত পুষ্টিগুন পায়। তাই আপনি ঘরে বসেই দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা তৈরি করতে পারেন। আসুন দেখে নেই ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা।
উপাদান | পরিমান/ কেজি |
---|---|
ভুট্টা | ২ কেজি |
গমের ভুসি | ৪ কেজি |
রাইচ পালিশ | ২ কেজি |
শুটকি মাছের গুঁড়ো | ১ কেজি |
সয়াবিন মিল | ১ কেজি |
চালের গুঁড়া | ৩.৬০ কেজি |
ধানের গুঁড়া | ১ কেজি |
প্রোটিন ৬০% | ২ কেজি |
ঝিনুক চূর্ণ | ২ কেজি |
সরিষা দানা | ২৫০ গ্রাম |
সরিষার খৈল | ১৫০ গ্রাম |
তিলের খৈল | ২০০গ্রাম |
ডিমের খোসা | ২০০গ্রাম |
লবণ | ৭৫ গ্রাম |
দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন অনেকেই আমরা জানি না। এটি একটি মুরগি পালনের সময়ে সাধারণ প্রশ্ন।বিভিন্ন জাতের মুরগি বিভিন্ন সময়ে ডিম দিয়ে থাকে তার মধ্যে দেশি মুরগি ডিম দিয়ে থাকে প্রায় সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকে৬ মাস বয়সের মধ্যে। দেশি মুরগি ১৮ থেকে ২২ ডিম দিয়ে থাকে। তবে মুরগির পুষ্টিগুণ কম হলে ডিমও কম দেয়।
দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা করার পাশাপাশি ডিম দেয়ার পর মুরগিকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে। এবং মুরগি যখন কুচে হওয়ার পর কুচে সারানোর জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে হবে যাতে তাড়াতাড়ি কুচে ভাব কমে যায়।
- মুরগিকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে
- ডিম পাড়ার পর যতদূর সম্ভব উন্নত মানের খাবার খাওয়াতে হয়।
- ভিটামিন খাওয়াতে হবে।
- কচি সারানোর জন্য মুরগিকে মাঝে মধ্যে গোসল করিয়ে দিতে হবে।
- আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশি মুরগির ডিম কত দিনে ফুটে
দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা করে ডিম পাড়া মুরগিকে খেতে দিতে হবে এবং মুরগি যখন ডিম দেওয়া বন্ধ হবে তখন মুরগি কুঁচে লাগে।আর তখন মুরগির ডিমের তা দিতে শুরু করে এবং সেইদিন থেকে মুরগির পেটের নিচে ডিম দিয়ে মুরগিকে তা দিতে দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশি মুরগির কত দিনে ডিম ফুটে? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই জানা নাও থাকতে পারে আসুন জেনে নেই দেশি মুরগির ডিম কত দিনে ফুটে।
প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি মুরগির ডিম ফুটানোর সময়ঃ সাধারণত বিভিন্ন জাতের মুরগি এবং কবুতর পাখি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তুলে। দেশি মুরগি ডিম দেওয়ার শেষের দিন থেকে ২১ থেকে ২৩ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে যায়। তাই যখন মুরগির ডিম দেয় তখন সাথে সাথে ডিমগুলো সরিয়ে নিতে হয়, তা না হলে ডিমের উপর প্রতিদিন বসে ডিম দেয়ার সময় পর্যন্ত থাকলে ওই ডিমে অনেকটা তাপ বেশি হয়ে যায়। ফলে যেদিন থেকে ডিম দেওয়া বন্ধ করে সেই দিনের ডিম সবার পরে বাসে উঠে।
ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানোর সময় ঃইনকিউবেটর এ কেরোসিন অথবা বিদ্যুতের সাহায্যে ডিম ফোটানো হয়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা ফুটানো হয় তাকে।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি
দেশি মুরগি ডিম দেয়ার সময় দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা তৈরি করে মুরগিকে খেতে দিতে হয় এবং ডিম পাড়া হয়ে গেলে ডিম ফুটানোর ব্যবস্থা করতে হয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় তার মধ্যে সাধারণত ডিম দুই পদ্ধতিতে ফোটানোর কথাই বলা থাকে একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও দ্বিতীয়টি কৃত্তিম পদ্ধতি ( ইনকিউবেটর)।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ নিষিদ্ধ ডিমের ওপর মুরগি তার নিজের দেহের তাপ দিয়ে ডিম ফুটিয়ে থাকে তাকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম ফুটানো বলে। এতে করে মাঝেমধ্যে দুই একটি ডিম নষ্ট হয়ে যায় কারণ মুরগি ঠিকমতো সব ডিমের উপর তা নাও হতে পারে।
কৃত্রিম পদ্ধতিঃ মেশিনের সাহায্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয় মেশিনটির নাম ইনকিউবেটর। এর মাধ্যমে ডিম ফুটালে ডিম ফোটার হার বেশি হয়। ডিম নষ্ট হয় না।
দেশি মুরগির ডিম ফুটানোর পদ্ধতি
দেশি মুরগির ডিম ফুটানোর পদ্ধতি প্রায় প্রথম ধাপে অবলম্বন করে থাকে। যারা সাধারণ বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে মুরগি পালন করে থাকে তারা। যেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম ফুটানো হয়। যারা খামারে ও খাচায় মুরগি পালন করে এবং অনেক বেশি মুরগি পালন করে তারা দেখা যায় কৃত্রিম পদ্ধতিতে যদি কাজ না করে ভালো লাগেঅর্থাৎ ইনকিউবেটর এর মাধ্যমে মুরগির ডিম ফোটানো হয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি মুরগির ডিম ফুটানো নিয়ম
দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা জানার পাশাপাশি দেশি মুরগির ডিম প্রাকৃতিক উপায়ে বেশি ফোটানো হয় কারণ দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তাই ডিম ফুটালে মুরগির রোগে আক্রান্ত কম হয়। একটি গামলার ভেতরে কিংবা একটি ঝাকার ভিতরে নরম খড়কুটো সুন্দর করে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর ডিম গুলো সুন্দরভাবে গোল করে সাজিয়ে দিতে হবে।
যাতে করে মুরগির পেটের নিচে সবগুলো ডিম থাকে। সবগুলো ডিম মুরগির পেটের নিচে না থাকলে বাচ্চা ফুটবে না। আবার অনেকগুলো ডিম একসাথে দেওয়া যাবে না কারণ কারন মুরগির পেটের নিচে অনেকগুলো ডিম আটবে না। ফলে যেগুলো বাইরে থাকবে ওগুলার সঠিক মত তা দেয়া হবে না যার কারণে ওই ডিমটা নষ্ট হয়ে যায় বাচ্চা ফুটে না।
মুরগিকে ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গা রাখতে হবে চারিদিকে ও গোলাকার হতে হবে জায়গাটি এবং এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে। মুরগি মুরগির বসার মাঝখানে জায়গা একটু নিচু
হতে হবে যাতে করে ডিম গুলো গড়িয়ে না পরে। কোন রকমের গন্ধযুক্ত স্থানে রাখা যাবে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে তা না হলে মুরগির রোগকে আক্রান্ত হবে।
ঝাকার কাছে মুরগির জন্য খাবার রাখতে হবে পানি রাখতে হবে। তাহলে তা না হলে মুরগি বার বার ডিম থেকে উঠে গিয়ে বাইরে খাওয়ার সন্ধানে যাবে। তাই যাতে মুরগি ডিম থেকে বেশি বেশি না উঠে, তারজন্য খাওয়ার গুলো সামনে রেডি রাখতে হবে। আর বেশি বেশি ডিম থেকে উঠে গেলে সেই ডিমে তা দেওয়া ভালো হয় না। মাঝে মাঝে খেয়াল রাখতে হবে ডিমগুলো ভেঙ্গে গেল কিনা।
ডিম ফোটানোর সময় হলে লক্ষ্য রাখতে হবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলো কিনা। ডিম ফুটানোর জন্য প্রথম দিনগুলো একসাথে করে ঢাকার মধ্যে বসাতে হবে সন্ধ্যা বেলায়। এভাবে বসালে মুরগি ২১ দিনের পর থেকে প্রায় সন্ধ্যার দিকেই বাচ্চা ফুটে থাকে এতে করে সারারাত মুরগি বিশ্রাম নিতে পারবে। বাচ্চা ফুটার পরবর্তীতে বাচ্চাকে এবং মুরগিকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলের ভিতরে আলোচনা করা হয়েছে দেশি ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা ও খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি পাশাপাশি আরো অন্যান্য বিষয়গুলো।আশা করি ডিম পাড়া মুরগিদের যত্নের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে, অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। তারাও যেন দেশি মুরগি পালনে উৎসাহ হয়। আর নতুন নতুন তথ্য পেতে আমার এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন এখানে প্রতিনিয়ত আপডেট খবর এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তুলে ধরা হয়।
সাবিহা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url